আঃ রহিম,ঝিনাইদহ :
এখন চলছে ভাষার মাস। যে ভাষায় আমরা কথা বলি সে ভাষাও প্রতিষ্ঠা করা হয় রক্ত দিয়ে। ভাষার জন্য আত্মহুতি পৃথিবীতে এক বিরল ঘটনা। ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনে রয়েছে গর্বিত অধ্যায়। হাজারো বিকৃত ইতিহাস ও গুজব নির্ভর তথ্যে মধ্যে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে ঋনি হয়ে থাকলেন জীবিত ভাষা সৈনিক এড আমির হোসেন মালিতা। বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারিতে এ আন্দোলন চুড়ান্ত রূপ ধারণ করে। ভাষার জন্য জীবন দেন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অসংখ্য মানুষ। পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলন নিয়ে। আর এই বিকৃতির কারণ হচ্ছে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ ভাষা সৈনিকদের মৃত্যু। বর্তমান নতুন প্রজন্মের অনেকেই ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভালোভাবে জানে না। প্রশাসনে আসা কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরাও ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের খন্ডিত অংশ প্রচার করছে। ভাষা যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এখনো অনেকেই জীবতি। কিন্তু বয়সজনিত কারণে তারা ঠিকমতো স্মৃতি চারণ করতে পারছেন না। দুই বছর আগে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন জীবিত ৬ জন ভাষা সৈনিকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পোষ্টার তৈরী করেছিল। সেখানে তাদের ছবি শোভা পায়। কিন্তু অগ্রভাগে থাকা বেশ কয়েকজনের নাম রজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন এমন একজন জীবিত সৈনিক হচ্ছে বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও চলচিত্র পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মালিতা। ১৯৯৯ সালের ২১ ফেব্রয়ারি তিনি “ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহ” নামে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে অনেক গুরুত্বপুর্ন তথ্য সন্নিবেশন করে তিনি ঝিনাইদহের তৎকালীন রাজনীতিবিদ, তাদের নেতৃত্ব, রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অজানা দালিলিক তথ্য প্রমান তুলে ধরেছেন। কারো পক্ষে তার লেখা এই ইতিহাস বিকৃত বা অস্বীকার করার হিম্মত নেই। কারণ তিনি সরাসরি ভাষা আন্দোলনের একজন জীবিত সৈনিক হিসেবে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তার বইতে উল্লেখ করেছেন। আমির হোসেন মালিথা তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ঝিনাইদহ শহরে একজন কট্টরপন্থি মুসলিমলীগের সমর্থক চিকিৎসক ছিলেন। তাকে ‘হুগলী ডাক্তার’ বলে সবাই চিনতেন। ১৯৫২ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে তার মুখ থেকেই তখনকার ছাত্ররা ঝিনাইদহ শহরের কাজীর হোটেলে বসে বা দাড়িয়ে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে খবর জানতে পারেন। কারণ তখন ঝিনাইদহে কোন পত্রিকা আসতো না। কোন পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের খবর ছাপা হতো না। ভারত থেকে একটি পত্রিকা আসতো, তাও আবার ২/৩ দিন পর। রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর বা পাকিস্থানের কোন রেডিও স্টেশন ভাষা আন্দোলনের খবর প্রচার করতো না। তবে ভারতের আকাশবানীতে মাঝেমধ্যে ভাষা আন্দোলনের খবর প্রচার হতো। সে সময় আওয়ামী মুসলিমলীগের নেতা সিরাজুল ইসলাম পচা মিয়া ও ডাঃ কে আহম্মেদের বাসায় রেডিও শোনার সুবিধা পেতেন তরুন ছাত্র নেতারা। পাকিস্থানপন্থি সেই হুগলী ডাক্তার গল্পেরছলে একদিন বলে ফেলেন, “ছি ছি ছি ঢাকায় মুসলিম ছাত্রদের জবানে উর্দুর বদলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে আন্দোলন দেশটা রসাতলে নিয়ে যাবে”। সেখানে দাড়িয়ে থাকা তখনকার তরুন ছাত্রনেতা পরবর্তীতে উজির আলী হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলজার হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ ওরফে টিপু হুগলী ডাক্তারের উক্তিটি শোনেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের কোন জ্ঞান তাদের ছিল না। তারা উভয় সবেমাত্র হাইস্কুলের ছাত্র। ৫২ সালের ফেব্রয়ারি মাসের ২/৩ তারিখে তৎকালীন ঢাকা কলেজের ছাত্র সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের মরহুম জহর আলী মিয়ার মেজো ছেলে এনামুল হক কোটন বাড়িতে আসেন। মুলত তার কাছ থেকেই ভাষা আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কোটন মিয়া সে সময় ঢাকা থেকে হ্যান্ডবিল, পোষ্টার, প্যাম্পপ্লেট ও গনসাক্ষরের জন্য কিছু ফরম নিয়ে আসেন। সেগুলো গ্রহন করেন নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ার জাহিদ টিপু (সাবেক তথ্য মন্ত্রী), ভুটিয়ারগাতি গ্রামের গোলজার হোসেন, দরিগোবিন্দপুর গ্রামের সাব্দার হোসেন সাবু ও খাজুরা গ্রামের হাবিবুর রহমান প্রমুখ ছাত্রনেতারা। কোটন মিয়া ঝিনাইদহের তরুন ছাত্রনেতাদের হাতে প্রচারপত্র ধরিয়ে দিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে গনসাক্ষর ও করণীয় পরামর্শ দিয়ে চলে যান। কোটন মিয়া হচ্ছে ঝিনাইদহের ভাষা আন্দোলনের অগ্রপথিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ভাতিজা। তিনি চাচা জাহিদ হোসেন মুসা মিয়াকে যশোরে খবর দেওয়ার ব্যবস্থাও করে যান। জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া তখন পুর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্রলীগের যশোর জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও কলেজ ছাত্র। এদিকে আন্দোলনমুখী ছাত্ররা সে সময় জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ঝিনাইদহে আগমনের প্রত্যাশায় দিনগুনতে থাকেন। মুসা মিয়া না আসায় কোন কাজই ঠিকমেতা এগুচ্ছিলো না। না মিছিল মিটিং না গনসাক্ষর আদায় ও পোস্টারিংয়ের কাজ। মুসা মিয়া ঝিনাইদহে আসার পর তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ লাগে ঝিনাইদহে। ওই সময় ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারী মোহন ঘোষাল ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রনেতাদের গোপনে খবর দেন যে বাংলা ভাষার দাবীতে ২১ ফেব্রয়ারি সারা দেশে হরতাল ডাকা হয়েছে। আন্দোলনমুখী ছাত্ররা অসীম সাহস বুকে নিয়ে দিনক্ষন গুনতে থাকেন। কলেজ ছাত্র মুসা মিয়া আগেই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটির সভাপতি হন গোলজার হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক হন ১০ম শ্রেনীর ছাত্র পরবর্তীতে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ। কমিটিতে ডাঃ আব্দুল লতিফ ও আমীর হোসেন মালিতাও ছিলেন। মালিতাকে প্রচার সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠন ও ২১ ফেব্রয়ারির হরতাল সামনে করে উত্তাল হয় ঝিনাইদহ। এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সাহস যোগায় ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে
Address: Unterfeldstraße 25, 44369 Dortmund,Germany
Contact:USA: +1270355-3582 Germany: +4917672714681 BD:+880 1853 521 334, +8801708936801, +8801785844701.
Email: [email protected]